হাত হারানো সাকুলের লড়াইয়ের গল্প

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশের কোমল মাটির বুকে হাজারো মানুষের জীবন সংগ্রামের গল্প। মেহেরপুরের সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামে এমনই এক হার না মানা তরুণ মো. সাকুল। সবুজে ছাওয়া গোপালপুর গ্রামে গেলে দেখা যাবে একপাল ছাগল চড়াচ্ছেন এক তরুণ, যার দুই হাত নেই। ছাগল খেয়ে চলেছে আপন মনে। আর যুবকটি লক্ষ রাখছে ছাগলগুলোকে। সেই পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের হাত ছাড়া যুবকটিই সাকুল। সফল ছাগল খামারি।

অথচ মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনায় বদলে যেতে বসেছিল সাকুলের জীবন। নয়-দশ বছর বয়স তখন তার। দুরন্ত ছেলেটি মাঠে গিয়েছিল ছাগল চড়াতে। গ্রামে তখন নতুন এসেছে বৈদ্যুতিক লাইন। বিদ্যুতের বড় বড় খাম্বা সারি ধরে চলে গেছে চোখের সীমানার বাইরে। দুরন্ত শিশুটির ইচ্ছে হলো, বিদ্যুতের লাইন ছুঁয়ে দেখার। তরতর করে উঠে গেল একটা বৈদ্যুতিক খাম্বার মাথায় আর ধরে ফেলল তার। প্রচণ্ড শক খেয়ে ছিটকে পড়ল মাটিতে।  খুব দ্রুত ছোট্ট সাকুলকে মহেরপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো। সদর হাসপাতাল সাকুলের চিকিৎসায় অপারগতা প্রকাশ করার তিন দিন পরে নিয়ে আসা হলো ঢাকায়। ডাক্তার বললেন, হাত কেটে ফেলতে হবে।

গ্রামে ফিরে আসার পর সবাই তিরস্কার করতে শুরু করল সাকুলকে। ভিক্ষা করার পরামর্শ দিল অনেকে। কিন্তু সাকুলের বাবার বুকে কথাগুলো বড় বাজল। তাদের কথা না শুনে ছেলেকে কিনে দিলেন কয়েকটি ছাগল। তারপর? একটি সফলতার গল্প। সাকুলের এখন ৫০টি ছাগল, এর মধ্যে পনেরটি মা ছাগল। ছয় মাস পর পর দুই থেকে তিনটি করে বাচ্চা দেয় এসব মা ছাগল। প্রতিবছর ৮০ থেকে এক লাখ টাকার ছাগল বিক্রি হয় সাকুলের।

ছাগল পেলে পেলে সাকুল এখন ছাগল নিয়ে রীতিমতো বিশেষজ্ঞ। নতুন খামারি বা যারা ছাগলের খামারে আগ্রহী তাদের উদ্দেশ করে সাকুল বলেন, মা ছাগল দিয়ে খামার শুরু করতে হবে। প্রথমে আট-দশটা নেওয়াই ভালো। ছাগলের একমাত্র মারাত্মক রোগ হচ্ছে পিপিআর। যে রোগ হলে ছাগলকে বাঁচানো যায় না। ছয় মাস পরপর পিপিআর ভেকসিন দিলে প্রাণঘাতী এই রোগ থেকে ছাগলকে বাঁচানো সম্ভব।

তাই ছয় মাস পরপর খামারিকে পশু হাসপাতালে যেতে হবে ভেকসিম দিতে। জ্বর-সর্দিতে ওষুধ খাইয়ে দিলেই হবে। তবে জ্বর-সর্দি এমন কোনো সমস্যা না। তা ছাড়া তিন মাস পরপর কৃমির বড়ি খাওয়াতে হবে ছাগলকে। দিনে দুইবার, সকাল-বিকাল মাঠে ছাগল চড়াতে যায় সাকুল। ফলে খাবার কিনে খাওয়াতে হয় না ছাগলগুলোকে। তবে বর্ষার সময় খাবার কিনে খাওয়াতে হয়।

দুই হাত হারানো সাকুল এখন জীবন সংগ্রামের প্রতীক। গ্রামের গণ্ডি ছাপিয়ে তার জীবন সংগ্রাম হাজার হাজার সক্ষম মানুষের প্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর